শুধু উন্নয়নে কি ভোট আসে?

নঈম নিজাম: শুধু উন্নয়নে কি ভোট আসে? দেশে বিস্ময়কর অনেক উন্নয়ন হয়েছে গত ১৪ বছরে। দেশের ৫ কোটি মানুষ সরাসরি পাচ্ছে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা। বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছে মানুষ। গরিব অসহায়রা পাচ্ছে ভিজিএফ কার্ডে খাদ্য সহায়তা। বাংলাদেশে এভাবে সরাসরি সহায়তা অতীতে কেউ কোনো দিন কল্পনাও করেনি। কেউ দেখেনি এমন উন্নয়নও। কথামালার ফুলঝুরিতে সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা অঙ্গীকার করতেন। বাস্তবায়ন করতেন না। সেই দিন আর নেই। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের চেহারা বদলে গেছে। বিদেশিরা এসে থমকে দাঁড়ান। অবাক চোখে বলেন, এই বাংলাদেশ অচেনা। স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। তার দেশের আরেক কূটনীতিক ডোনাল্ড লু দেখে গেলেন বাংলাদেশ কীভাবে দ্রুত বদলে গেল। অর্জন করল সমৃদ্ধি। কিছুদিন আগে কিছু ভারতীয় সাংবাদিক বন্ধু ঢাকায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে দেখা হলো। কথা হলো। একজন জানালেন, সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০১ সালের ভোটের তথ্য সংগ্রহে। তারপর আসেননি। এবার এসে অনেক ঘুরলেন। প্রশ্ন করলাম, কেমন লাগছে? কী দেখলেন? জবাবে বিস্ময় নিয়ে পদ্মা সেতু দেখার কথা বললেন। কক্সবাজারে স্বপ্নের রেলস্টেশন তৈরি দেখা, চট্টগ্রামের চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের কথা জানালেন। জাপানের সদ্য চলে যাওয়া রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় শেষ মুহূর্তে। মানুষটি সহজ-সরল ছিলেন। অনেকবার দেখা হয়েছে। তিনি সব সময় উন্নয়নের প্রশংসা করতেন। আমাকে তিনি বলেছেন কুতুবদিয়ার উন্নয়নের গল্প। এক কুতুবদিয়ার পরিবর্তনে বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। শেখ হাসিনারও অনেক প্রশংসা করতেন। সেই মানুষটি কী কারণে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত বক্তব্য দিলেন দেখতে হবে। প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি, কারা এমন প্রশ্ন করলেন ভাবতে হবে। বিশাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনীতিকদের কাজ কী? তারা কীভাবে কাজ করছেন? গ্যাপগুলো কোথায় হচ্ছে চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচনের বছরে অহেতুক ঝামেলা তৈরির চেষ্টা হবে। ভুল বোঝাবুঝিও থাকবে। সবকিছুর একটা সমাধান আছে। অনেক বিদেশি সাংবাদিক বন্ধুকে দেখেছি বাংলাদেশ নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করতে। সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরতেই মুহূর্তে তাদের বদলাতেও দেখেছি। কাজটা করতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। কারণে-অকারণে বিদেশিদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির মানে নেই।

 

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাবে। উন্নতি-সমৃদ্ধির পথে বাধা আসবে। সেই বাধা অতিক্রমের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। রাজনীতি জনগণের জন্য। সবাই জনগণের রাজনীতি করতে পারেন না। গড়তে পারেন না ইতিহাসও। সময়ের সঙ্গে টিকতে হলে মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। ইতিহাসের পালাবদলের সাক্ষী হতে প্রয়োজন দেশপ্রেমের। ভারতের স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহরু এক সকালে সেভ করতে গিয়ে দেখেন ব্লেডে লেখা মেড ইন ইংল্যান্ড। বুঝলেন ভারত স্বাধীন হলেও নির্ভর করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের ওপর। অন্য দেশের ওপর। অফিসে এলেন। তারপর ডাকলেন টাটাসহ ভারতীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের। বললেন, ভারতে শিল্পায়ন করতে হবে। ব্লেড থেকে গাড়ি সব বানাতে হবে। বিকাশ ঘটাতে হবে দেশি শিল্পের। রাষ্ট্র সহায়তা দেবে ব্যবসায়ীদের। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সবাই সাড়া দিলেন। সদ্যস্বাধীন ভারতে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। এমন স্বপ্ন নিয়েই দেশটা স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সময় পাননি। আজ তাঁর মেয়ে ক্ষমতায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ একটা অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। কল্পনা নয়, সত্য হলো এই ঢাকা শহরে মেট্রোরেল চলছে। কখনো ভাবতেও পারিনি মেট্রোরেল দেখব। কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল হয়েছে। আজ থেকে শত বছরের বেশি সময় আগে ব্রিটিশরা টেমস নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করেছিল। ব্রিটিশরা তখন এ দেশ শাসন করত। টেমসের নিচে তৈরি করা টানেলে আমাদের দেশের রাজস্বও ছিল। অবদান ছিল। অবিভক্ত ভারতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। ব্রিটিশের বিদায়ের ৭৫ বছর পর টানেল যুগে প্রবেশ করলাম আমরা। পদ্মায় নির্মাণ করলাম ব্রিজ। ছয় লেনের সড়ক যুগেরও হয়েছে সূচনা। ঢাকা শহরে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে উড়ালসড়ক। চলছে পাতালরেল নির্মাণের প্রস্তুতি। সরকারের পাশাপাশি আমাদের বেসরকারি খাত এখন গোটা বিশ্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক এখন পরেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক। শুধু পোশাক, বস্ত্র খাত নয়, টিস্যু পেপার থেকে বিটুমিন, সিমেন্ট, ইস্পাত সবই উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। খাদ্যশিল্পে হয়েছে বিস্ময়কর অগ্রগতি।

 

এই সেদিনও অনেক দেশ আমাদের খাটো করে দেখত। ২০১২ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। দিল্লিতে রিম আঞ্চলিক অঞ্চলের সাংবাদিকদের নিয়ে একটা সম্মেলন ছিল। সবকিছুর আয়োজক ছিল ভারত সরকার। ইয়ামেন টাইমসের এক সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হলো। সেই সাংবাদিক হুট করে বললেন, তুমি বাংলাদেশি? তোমার দেশের অনেক লেবার আমার দেশে কাজ করছে। তার সঙ্গে যুক্ত হলেন মরিশাসের আরেক সাংবাদিক। তিনিও জানালেন তার দেশের গার্মেন্টে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করেন। মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল। ইরানি সাংবাদিক অ্যালহাম আমার দিকে তাকালেন। মিষ্টি হেসে বললেন, মন খারাপ করবে না তাদের টিপ্পনীতে। আমি হাসলাম। সবাইকে উদ্দেশ করে বললাম, আমাদের শ্রমবাজার নিয়ে তোমাদের এভাবে কথা বলা ঠিক না। তোমার দেশের উন্নয়নকাজে আমার দেশের নাগরিকরা সহায়তা করছেন। কাজ করে খাওয়া খারাপ কিছু নয়। তবে জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে বিস্ময় পরিবর্তন আছে। প্রবাসে আমাদের শ্রমবাজার আছে। আবার উন্নত দেশে আমাদের নাগরিকরা ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো করছেন। ব্রিটেনে আমার দেশের তিন নারী হাউস অব কমন্সের সদস্য। ব্রিকলেনের সাইনবোর্ডগুলো বাংলায় লেখা। ব্রিটেনের বেশির ভাগ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের মালিক বাংলাদেশি। সাদা চামড়ার মানুষ তাদের রেস্টুরেন্টে কাজ করে। লন্ডনে ইকবাল আহমেদ অনেক সাদা চামড়ার মানুষকে কাজ দিয়েছেন। আমেরিকা যাও। সেখানেও অনেক বাঙালি বিত্তশালী আছেন। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অনেক বিদেশি কাজ করে। জ্যাকসন হাইটসে হাঁটলেই দেখবে বাংলায় সাইনবোর্ড। বাংলাদেশিরা সারা দুনিয়াতে ভালো করছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিতে। তোমাদের দেশে আমাদের যে ভাইয়েরা কাজ করছেন, তারা তোমাদের সহায়তা করছেন উন্নয়নে। এটাকে স্মরণ করবে। তেহরান টাইমসের দুই সাংবাদিক বন্ধু আমাকে থামালেন। বললেন, এত সিরিয়াস হচ্ছ কেন? ওরা হয়তো কথার কথা বলেছে। জবাবে বললাম, ওদের কথায় টিপ্পনী আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বদলে গেছে। তারপর বললাম, অর্থনীতির চাকা ঘুরতে থাকে। একটা সময় ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে লোকজন আমাদের দেশে ব্যবসা করতে আসত। তোমাদের অর্থনীতি খারাপ ছিল বলেই এখানে আসতে। আফগান থেকে আসত কাবুলিওয়ালারা। ব্রিটিশ, ডাচ্, পর্তুগিজ, ওলন্দাজরা আসত আমাদের দেশের সম্পদ লুটে বড়লোক হতে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাস্ত করে বাংলা দখলের পর কী পরিমাণ সম্পদ মুর্শিদাবাদ থেকে লুট করে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেসব কাহিনি ইতিহাসে আছে। ব্রিটেনের আদালতে লর্ড ক্লাইভের শাস্তি হয়েছিল চুরির দায়ে। সঠিকভাবে অনেক কিছু আসেনি ইতিহাসে। উন্নত বিশ্ব দাবিদার এ দেশগুলোর উচিত আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

 

বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের আরও দুটো গল্প শোনালাম। বললাম, আমাদের অবিভক্ত ভারতে মুঘল আমলে একজন সম্রাট ছিলেন। তার নাম আওরঙ্গজেব। মিথ আছে, তিনি হজ পরিচালনায় সৌদি আরবকে আর্থিক সহায়তা করতেন। সৌদি আরবের আর্থিক অবস্থা তখন ভালো ছিল না। হজ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। তাই প্রতি বছর ১৭টি উটের পিঠে স্বর্ণমুদ্রা পাঠাতেন দিল্লির বাদশাহ। সঙ্গে একটা চিঠি দিতেন। মক্কার গভর্নরকে লেখা সেই চিঠিতে লেখা থাকত, তোমাদের আর্থিক সংগতির কথা জানা আছে। তাই হজের জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠালাম। আশা করি এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করবে। কোনো অনিয়মের খবর পেলে পরেরবার আমি আসব তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। উনিশ শতকে বাংলার একজন মহীয়সী নারী নবাব ছিলেন ফয়জুন্নেছা। কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ের জমিদার ছিলেন। দুই হাতে দান করতেন। একবার তিনি হজে গিয়ে দেখলেন মহিলাদের জন্য আলাদা অজুর ব্যবস্থা নেই। অজুখানা, বাথরুমের অভাব আছে। হজ সম্পন্ন করে নবাব ফয়জুন্নেছা আরও ছয় মাস থেকে গেলেন মক্কায়। তিনি মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে অজু, গোসল ও বাথরুম নির্মাণ করেন নিজের অর্থে। বিশ্বের বড় বড় শাসক বারবার ভারতবর্ষে হামলা করেছেন অর্থবিত্তের লোভে। লুট করেছেন এ দেশের সম্পদ। সোমনাথ মন্দির লুটের কাহিনি এখনো মানুষের মুখে মুখে। ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির মহাকাহিনি ইতিহাসে পড়ানো হয়। একবারও বলা হয় না তিনি কেন এ দেশে এসেছিলেন? আমাদের সম্পদ ছিল। সেসব লুট করতে, শাসন করতে এ দেশে সবাই আসত। সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনের শোভা ছিল কোহিনুর হীরা। দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। কোহিনুর হীরা এ সময় রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে আসে। ব্রিটিশ রাজমুকুটে বসানো হয় এ হীরাটি। ব্রিটিশরা এ হীরা লুট করে নিজ দেশে এখনো রেখে দিয়েছে গর্ব করে। ভাবে মনে হয়, তারা বিশাল একটা কাজ করেছে। বাস্তবে করেছে সম্পদ লুট। সমৃদ্ধিশালী বাংলা খুব বেশি সময় কখনই স্বাধীন ছিল না। সম্পদ, অর্থবিত্তের লোভে বিশ্ব লুটেরারা যুগে যুগে এ দেশে হামলা করেছে। ভারত বিভক্তির পর আমাদের জুড়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। ভাষা, সংস্কৃতি, সীমান্ত কোনো কিছুর সংশ্লেষণ ছিল না। শুধু ধর্মের দোহাই সামনে আনলেন তখনকার রাজনীতিবিদরা। পাকিস্তানিরাও এসে একইভাবে লুটে লিপ্ত হলো। বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে যেতে থাকল পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে যুক্ত হলেন একজন মানুষ। তিনি শেখ মুজিব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাঁর পেছনে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্ন দেখালেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হলো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কাছে। এখন তাঁর মেয়ে ক্ষমতায়। একাগ্রতা-নিষ্ঠা নিয়ে তিনি দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিচ্ছেন। বাস্তবায়ন করছেন বাবার স্বপ্নগুলো। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, এক জীবনে দেখে গেলাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, শেখ হাসিনার উন্নয়ন।

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে। তার পরও অনেকেই বলছেন, উন্নয়নে কি ভোট আসে? এত কাজ করার পরও কি মানুষ খুশি? এমন প্রশ্ন আমারও মনে আসে। মানুষকে খুশি করা কঠিন। চাঁদ এনে দিলে সাময়িক খুশি হয়। তারপর বলে, তিনি চাইলে সূর্যটা এনে দিতে পারতেন। তিনি সেই কাজটি করেননি। বড় অদ্ভুত মানুষের ভিতরটা। স্বাভাবিকতা থাকলে দেশটা স্বাধীন করার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত কেন হলো? কেন তিনি বাঁচতে পারলেন না? বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর চারটি বছরও সময় পেলেন না। ওপরে আল্লাহ বলে একজন আছেন। তাই বঙ্গবন্ধু যা করতে পারেননি তাঁর মেয়ে তা করে দেখাচ্ছেন। উন্নয়নের ইতিহাসে সারা বিশ্বকে চমকে দিচ্ছেন তিনি। গড়েছেন এক নতুন ইতিহাস। এ ইতিহাস সিঙ্গাপুরের লি কিউ উইনি, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের। বাংলাদেশে আল্লাহপাক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন। হয়তো আল্লাহ বিচিত্র অর্থনীতির এই দেশে শেখ হাসিনাকে দিয়ে আরও বড় কিছু করাতে চান। বিশ্বাস করি, তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। ১৪ বছরের টানা শাসনে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। এ উচ্চতার ধারাবাহিকতা রাখতেই তিনি আবার লড়বেন ভোটে। গ্রামগঞ্জে যাই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গালাগাল শুনি। কিছু ব্যাংক লুটেরা ব্যবসায়ীর সমালোচনা শুনি। আবার সবাই বলেন, শেখ হাসিনাকেই দরকার। তিনি ৫ কোটি মানুষকে বিভিন্ন ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তাঁর নিজের দলের লোকদের ছাড় দেননি। দেবেনও না। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। তিনি হিমালয় হৃদয়ে করেন মানবতার সেবা। আবার ভুল করলে দলের লোককে পাঠান জেলে। উন্নয়নে তিনি দুনিয়ার মানুষকে চমকে দিয়েছেন। করোনার অর্থনীতি জয় করেছেন। বিনা পয়সায় দিয়েছেন টিকা। এখন লড়ছেন যুদ্ধের অর্থনীতি জয় করতে। অর্থনৈতিক লুটেরাদের তিনি ছাড় দেবেন না। বাবার কাছ থেকে ছোটবেলায়ই পেয়েছেন দেশপ্রেম। তিনি না থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কে রক্ষা করবে? মেট্রোরেলের পর দরকার পাতালরেল। কে করবে শেখ হাসিনা ছাড়া? ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছয় লেন ও সার্ভিস রোড, ইউলুপ কে করবে তিনি ছাড়া? কক্সবাজার, পটুয়াখালী রেল যাচ্ছে। বাকি কাজগুলো কে সম্পন্ন করবে? বেসরকারি খাতের উত্থানের ধারাবাহিকতা এত সাহস নিয়ে কে রক্ষা করবে? আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। তাঁর বাবার ওপর ভরসা রেখে এ দেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে। তাঁর ওপর আস্থা রেখে পেয়েছে সমৃদ্ধ বদলে যাওয়া অর্থনীতির একটি দেশ। এখন প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, দাবির সত্যতা নিয়ে যা জানা গেল

» জানুয়ারি থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের এমপিও ইএফটিতে

» সাত দাবিতে রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ

» স্মার্টফোনের আয়ু একটি স্মার্টফোন কতদিন চালানো যায়?

» পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, মামলাও হচ্ছে

» জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি সত্ত্বেও কৃষি উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে : রাষ্ট্রদূত

» রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে আ.লীগ: উপদেষ্টা নাহিদ

» বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফুল, দুর্গন্ধে কাছে ঘেঁষা যায় না

» ঘুমের মধ্যে পায়ের পেশিতে টান পড়ে কেন, করণীয় কী?

» গাইবান্ধায় জন্ম নিল ছয় পা বিশিষ্ট বাছুর

  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
পরীক্ষামূলক প্রচার...

শুধু উন্নয়নে কি ভোট আসে?

নঈম নিজাম: শুধু উন্নয়নে কি ভোট আসে? দেশে বিস্ময়কর অনেক উন্নয়ন হয়েছে গত ১৪ বছরে। দেশের ৫ কোটি মানুষ সরাসরি পাচ্ছে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা। বয়স্ক, বিধবা, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন ভাতা পাচ্ছে মানুষ। গরিব অসহায়রা পাচ্ছে ভিজিএফ কার্ডে খাদ্য সহায়তা। বাংলাদেশে এভাবে সরাসরি সহায়তা অতীতে কেউ কোনো দিন কল্পনাও করেনি। কেউ দেখেনি এমন উন্নয়নও। কথামালার ফুলঝুরিতে সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। রাজনীতিবিদরা অঙ্গীকার করতেন। বাস্তবায়ন করতেন না। সেই দিন আর নেই। বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের চেহারা বদলে গেছে। বিদেশিরা এসে থমকে দাঁড়ান। অবাক চোখে বলেন, এই বাংলাদেশ অচেনা। স্বাধীনতার পর হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। তার দেশের আরেক কূটনীতিক ডোনাল্ড লু দেখে গেলেন বাংলাদেশ কীভাবে দ্রুত বদলে গেল। অর্জন করল সমৃদ্ধি। কিছুদিন আগে কিছু ভারতীয় সাংবাদিক বন্ধু ঢাকায় এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে দেখা হলো। কথা হলো। একজন জানালেন, সর্বশেষ বাংলাদেশে এসেছিলেন ২০০১ সালের ভোটের তথ্য সংগ্রহে। তারপর আসেননি। এবার এসে অনেক ঘুরলেন। প্রশ্ন করলাম, কেমন লাগছে? কী দেখলেন? জবাবে বিস্ময় নিয়ে পদ্মা সেতু দেখার কথা বললেন। কক্সবাজারে স্বপ্নের রেলস্টেশন তৈরি দেখা, চট্টগ্রামের চোখ ধাঁধানো উন্নয়নের কথা জানালেন। জাপানের সদ্য চলে যাওয়া রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয় শেষ মুহূর্তে। মানুষটি সহজ-সরল ছিলেন। অনেকবার দেখা হয়েছে। তিনি সব সময় উন্নয়নের প্রশংসা করতেন। আমাকে তিনি বলেছেন কুতুবদিয়ার উন্নয়নের গল্প। এক কুতুবদিয়ার পরিবর্তনে বদলে যাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি। শেখ হাসিনারও অনেক প্রশংসা করতেন। সেই মানুষটি কী কারণে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবর্জিত বক্তব্য দিলেন দেখতে হবে। প্রেক্ষাপট, পরিস্থিতি, কারা এমন প্রশ্ন করলেন ভাবতে হবে। বিশাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনীতিকদের কাজ কী? তারা কীভাবে কাজ করছেন? গ্যাপগুলো কোথায় হচ্ছে চিহ্নিত করতে হবে। নির্বাচনের বছরে অহেতুক ঝামেলা তৈরির চেষ্টা হবে। ভুল বোঝাবুঝিও থাকবে। সবকিছুর একটা সমাধান আছে। অনেক বিদেশি সাংবাদিক বন্ধুকে দেখেছি বাংলাদেশ নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করতে। সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরতেই মুহূর্তে তাদের বদলাতেও দেখেছি। কাজটা করতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। কারণে-অকারণে বিদেশিদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির মানে নেই।

 

বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। এগিয়ে যাবে। উন্নতি-সমৃদ্ধির পথে বাধা আসবে। সেই বাধা অতিক্রমের দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। রাজনীতি জনগণের জন্য। সবাই জনগণের রাজনীতি করতে পারেন না। গড়তে পারেন না ইতিহাসও। সময়ের সঙ্গে টিকতে হলে মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। ইতিহাসের পালাবদলের সাক্ষী হতে প্রয়োজন দেশপ্রেমের। ভারতের স্বাধীনতার পর জওহরলাল নেহরু এক সকালে সেভ করতে গিয়ে দেখেন ব্লেডে লেখা মেড ইন ইংল্যান্ড। বুঝলেন ভারত স্বাধীন হলেও নির্ভর করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের ওপর। অন্য দেশের ওপর। অফিসে এলেন। তারপর ডাকলেন টাটাসহ ভারতীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের। বললেন, ভারতে শিল্পায়ন করতে হবে। ব্লেড থেকে গাড়ি সব বানাতে হবে। বিকাশ ঘটাতে হবে দেশি শিল্পের। রাষ্ট্র সহায়তা দেবে ব্যবসায়ীদের। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সবাই সাড়া দিলেন। সদ্যস্বাধীন ভারতে নিজস্ব ব্র্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। এমন স্বপ্ন নিয়েই দেশটা স্বাধীন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সময় পাননি। আজ তাঁর মেয়ে ক্ষমতায়। স্বাধীনতার দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ একটা অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। কল্পনা নয়, সত্য হলো এই ঢাকা শহরে মেট্রোরেল চলছে। কখনো ভাবতেও পারিনি মেট্রোরেল দেখব। কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল হয়েছে। আজ থেকে শত বছরের বেশি সময় আগে ব্রিটিশরা টেমস নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল করেছিল। ব্রিটিশরা তখন এ দেশ শাসন করত। টেমসের নিচে তৈরি করা টানেলে আমাদের দেশের রাজস্বও ছিল। অবদান ছিল। অবিভক্ত ভারতে তেমন উন্নয়ন হয়নি। ব্রিটিশের বিদায়ের ৭৫ বছর পর টানেল যুগে প্রবেশ করলাম আমরা। পদ্মায় নির্মাণ করলাম ব্রিজ। ছয় লেনের সড়ক যুগেরও হয়েছে সূচনা। ঢাকা শহরে একের পর এক নির্মিত হচ্ছে উড়ালসড়ক। চলছে পাতালরেল নির্মাণের প্রস্তুতি। সরকারের পাশাপাশি আমাদের বেসরকারি খাত এখন গোটা বিশ্বের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক এখন পরেন বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রনায়ক। শুধু পোশাক, বস্ত্র খাত নয়, টিস্যু পেপার থেকে বিটুমিন, সিমেন্ট, ইস্পাত সবই উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। খাদ্যশিল্পে হয়েছে বিস্ময়কর অগ্রগতি।

 

এই সেদিনও অনেক দেশ আমাদের খাটো করে দেখত। ২০১২ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ছে। দিল্লিতে রিম আঞ্চলিক অঞ্চলের সাংবাদিকদের নিয়ে একটা সম্মেলন ছিল। সবকিছুর আয়োজক ছিল ভারত সরকার। ইয়ামেন টাইমসের এক সাংবাদিক বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় হলো। সেই সাংবাদিক হুট করে বললেন, তুমি বাংলাদেশি? তোমার দেশের অনেক লেবার আমার দেশে কাজ করছে। তার সঙ্গে যুক্ত হলেন মরিশাসের আরেক সাংবাদিক। তিনিও জানালেন তার দেশের গার্মেন্টে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করেন। মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল। ইরানি সাংবাদিক অ্যালহাম আমার দিকে তাকালেন। মিষ্টি হেসে বললেন, মন খারাপ করবে না তাদের টিপ্পনীতে। আমি হাসলাম। সবাইকে উদ্দেশ করে বললাম, আমাদের শ্রমবাজার নিয়ে তোমাদের এভাবে কথা বলা ঠিক না। তোমার দেশের উন্নয়নকাজে আমার দেশের নাগরিকরা সহায়তা করছেন। কাজ করে খাওয়া খারাপ কিছু নয়। তবে জানিয়ে রাখি, বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে বিস্ময় পরিবর্তন আছে। প্রবাসে আমাদের শ্রমবাজার আছে। আবার উন্নত দেশে আমাদের নাগরিকরা ব্যবসা-বাণিজ্যে ভালো করছেন। ব্রিটেনে আমার দেশের তিন নারী হাউস অব কমন্সের সদস্য। ব্রিকলেনের সাইনবোর্ডগুলো বাংলায় লেখা। ব্রিটেনের বেশির ভাগ ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের মালিক বাংলাদেশি। সাদা চামড়ার মানুষ তাদের রেস্টুরেন্টে কাজ করে। লন্ডনে ইকবাল আহমেদ অনেক সাদা চামড়ার মানুষকে কাজ দিয়েছেন। আমেরিকা যাও। সেখানেও অনেক বাঙালি বিত্তশালী আছেন। তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অনেক বিদেশি কাজ করে। জ্যাকসন হাইটসে হাঁটলেই দেখবে বাংলায় সাইনবোর্ড। বাংলাদেশিরা সারা দুনিয়াতে ভালো করছেন ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতিতে। তোমাদের দেশে আমাদের যে ভাইয়েরা কাজ করছেন, তারা তোমাদের সহায়তা করছেন উন্নয়নে। এটাকে স্মরণ করবে। তেহরান টাইমসের দুই সাংবাদিক বন্ধু আমাকে থামালেন। বললেন, এত সিরিয়াস হচ্ছ কেন? ওরা হয়তো কথার কথা বলেছে। জবাবে বললাম, ওদের কথায় টিপ্পনী আছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বদলে গেছে। তারপর বললাম, অর্থনীতির চাকা ঘুরতে থাকে। একটা সময় ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ থেকে লোকজন আমাদের দেশে ব্যবসা করতে আসত। তোমাদের অর্থনীতি খারাপ ছিল বলেই এখানে আসতে। আফগান থেকে আসত কাবুলিওয়ালারা। ব্রিটিশ, ডাচ্, পর্তুগিজ, ওলন্দাজরা আসত আমাদের দেশের সম্পদ লুটে বড়লোক হতে। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাস্ত করে বাংলা দখলের পর কী পরিমাণ সম্পদ মুর্শিদাবাদ থেকে লুট করে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেসব কাহিনি ইতিহাসে আছে। ব্রিটেনের আদালতে লর্ড ক্লাইভের শাস্তি হয়েছিল চুরির দায়ে। সঠিকভাবে অনেক কিছু আসেনি ইতিহাসে। উন্নত বিশ্ব দাবিদার এ দেশগুলোর উচিত আমাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

 

বিভিন্ন দেশ থেকে আগতদের আরও দুটো গল্প শোনালাম। বললাম, আমাদের অবিভক্ত ভারতে মুঘল আমলে একজন সম্রাট ছিলেন। তার নাম আওরঙ্গজেব। মিথ আছে, তিনি হজ পরিচালনায় সৌদি আরবকে আর্থিক সহায়তা করতেন। সৌদি আরবের আর্থিক অবস্থা তখন ভালো ছিল না। হজ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। তাই প্রতি বছর ১৭টি উটের পিঠে স্বর্ণমুদ্রা পাঠাতেন দিল্লির বাদশাহ। সঙ্গে একটা চিঠি দিতেন। মক্কার গভর্নরকে লেখা সেই চিঠিতে লেখা থাকত, তোমাদের আর্থিক সংগতির কথা জানা আছে। তাই হজের জন্য আর্থিক সহায়তা পাঠালাম। আশা করি এ অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করবে। কোনো অনিয়মের খবর পেলে পরেরবার আমি আসব তোমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। উনিশ শতকে বাংলার একজন মহীয়সী নারী নবাব ছিলেন ফয়জুন্নেছা। কুমিল্লার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ের জমিদার ছিলেন। দুই হাতে দান করতেন। একবার তিনি হজে গিয়ে দেখলেন মহিলাদের জন্য আলাদা অজুর ব্যবস্থা নেই। অজুখানা, বাথরুমের অভাব আছে। হজ সম্পন্ন করে নবাব ফয়জুন্নেছা আরও ছয় মাস থেকে গেলেন মক্কায়। তিনি মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে অজু, গোসল ও বাথরুম নির্মাণ করেন নিজের অর্থে। বিশ্বের বড় বড় শাসক বারবার ভারতবর্ষে হামলা করেছেন অর্থবিত্তের লোভে। লুট করেছেন এ দেশের সম্পদ। সোমনাথ মন্দির লুটের কাহিনি এখনো মানুষের মুখে মুখে। ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খিলজির মহাকাহিনি ইতিহাসে পড়ানো হয়। একবারও বলা হয় না তিনি কেন এ দেশে এসেছিলেন? আমাদের সম্পদ ছিল। সেসব লুট করতে, শাসন করতে এ দেশে সবাই আসত। সম্রাট শাহজাহান নির্মিত ময়ূর সিংহাসনের শোভা ছিল কোহিনুর হীরা। দ্বিতীয় ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধের পর শিখদের হারিয়ে ব্রিটিশরা শিখ সাম্রাজ্য দখল করে। কোহিনুর হীরা এ সময় রানি ভিক্টোরিয়ার হাতে আসে। ব্রিটিশ রাজমুকুটে বসানো হয় এ হীরাটি। ব্রিটিশরা এ হীরা লুট করে নিজ দেশে এখনো রেখে দিয়েছে গর্ব করে। ভাবে মনে হয়, তারা বিশাল একটা কাজ করেছে। বাস্তবে করেছে সম্পদ লুট। সমৃদ্ধিশালী বাংলা খুব বেশি সময় কখনই স্বাধীন ছিল না। সম্পদ, অর্থবিত্তের লোভে বিশ্ব লুটেরারা যুগে যুগে এ দেশে হামলা করেছে। ভারত বিভক্তির পর আমাদের জুড়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানের সঙ্গে। ভাষা, সংস্কৃতি, সীমান্ত কোনো কিছুর সংশ্লেষণ ছিল না। শুধু ধর্মের দোহাই সামনে আনলেন তখনকার রাজনীতিবিদরা। পাকিস্তানিরাও এসে একইভাবে লুটে লিপ্ত হলো। বাংলাদেশের সম্পদ নিয়ে যেতে থাকল পশ্চিম পাকিস্তানে। প্রতিবাদ, প্রতিরোধে যুক্ত হলেন একজন মানুষ। তিনি শেখ মুজিব। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাঁর পেছনে দাঁড়াল। বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্ন দেখালেন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হলো ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের কাছে। এখন তাঁর মেয়ে ক্ষমতায়। একাগ্রতা-নিষ্ঠা নিয়ে তিনি দেশের উন্নয়ন এগিয়ে নিচ্ছেন। বাস্তবায়ন করছেন বাবার স্বপ্নগুলো। গ্রামের প্রবীণরা বলছেন, এক জীবনে দেখে গেলাম বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, শেখ হাসিনার উন্নয়ন।

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে। তার পরও অনেকেই বলছেন, উন্নয়নে কি ভোট আসে? এত কাজ করার পরও কি মানুষ খুশি? এমন প্রশ্ন আমারও মনে আসে। মানুষকে খুশি করা কঠিন। চাঁদ এনে দিলে সাময়িক খুশি হয়। তারপর বলে, তিনি চাইলে সূর্যটা এনে দিতে পারতেন। তিনি সেই কাজটি করেননি। বড় অদ্ভুত মানুষের ভিতরটা। স্বাভাবিকতা থাকলে দেশটা স্বাধীন করার মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত কেন হলো? কেন তিনি বাঁচতে পারলেন না? বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর চারটি বছরও সময় পেলেন না। ওপরে আল্লাহ বলে একজন আছেন। তাই বঙ্গবন্ধু যা করতে পারেননি তাঁর মেয়ে তা করে দেখাচ্ছেন। উন্নয়নের ইতিহাসে সারা বিশ্বকে চমকে দিচ্ছেন তিনি। গড়েছেন এক নতুন ইতিহাস। এ ইতিহাস সিঙ্গাপুরের লি কিউ উইনি, মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের। বাংলাদেশে আল্লাহপাক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা থেকে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেছেন। হয়তো আল্লাহ বিচিত্র অর্থনীতির এই দেশে শেখ হাসিনাকে দিয়ে আরও বড় কিছু করাতে চান। বিশ্বাস করি, তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। ১৪ বছরের টানা শাসনে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন উচ্চতা দিয়েছেন। এ উচ্চতার ধারাবাহিকতা রাখতেই তিনি আবার লড়বেন ভোটে। গ্রামগঞ্জে যাই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে গালাগাল শুনি। কিছু ব্যাংক লুটেরা ব্যবসায়ীর সমালোচনা শুনি। আবার সবাই বলেন, শেখ হাসিনাকেই দরকার। তিনি ৫ কোটি মানুষকে বিভিন্ন ভাতা ও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে তাঁর নিজের দলের লোকদের ছাড় দেননি। দেবেনও না। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। তিনি হিমালয় হৃদয়ে করেন মানবতার সেবা। আবার ভুল করলে দলের লোককে পাঠান জেলে। উন্নয়নে তিনি দুনিয়ার মানুষকে চমকে দিয়েছেন। করোনার অর্থনীতি জয় করেছেন। বিনা পয়সায় দিয়েছেন টিকা। এখন লড়ছেন যুদ্ধের অর্থনীতি জয় করতে। অর্থনৈতিক লুটেরাদের তিনি ছাড় দেবেন না। বাবার কাছ থেকে ছোটবেলায়ই পেয়েছেন দেশপ্রেম। তিনি না থাকলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা কে রক্ষা করবে? মেট্রোরেলের পর দরকার পাতালরেল। কে করবে শেখ হাসিনা ছাড়া? ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছয় লেন ও সার্ভিস রোড, ইউলুপ কে করবে তিনি ছাড়া? কক্সবাজার, পটুয়াখালী রেল যাচ্ছে। বাকি কাজগুলো কে সম্পন্ন করবে? বেসরকারি খাতের উত্থানের ধারাবাহিকতা এত সাহস নিয়ে কে রক্ষা করবে? আমাদের একজন শেখ হাসিনা আছেন। তিনি পারছেন। তিনি পারবেন। তাঁর বাবার ওপর ভরসা রেখে এ দেশের মানুষ একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছে। তাঁর ওপর আস্থা রেখে পেয়েছে সমৃদ্ধ বদলে যাওয়া অর্থনীতির একটি দেশ। এখন প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকতা।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন। সূএ: বাংলাদেশ প্রতিদিন

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



  
উপদেষ্টা -মাকসুদা লিসা
 সম্পাদক ও প্রকাশক :মো সেলিম আহম্মেদ,
ভারপ্রাপ্ত,সম্পাদক : মোঃ আতাহার হোসেন সুজন,
ব্যাবস্থাপনা সম্পাদকঃ মো: শফিকুল ইসলাম আরজু,
নির্বাহী সম্পাদকঃ আনিসুল হক বাবু

 

 

আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:ই-মেইল : [email protected]

মোবাইল :০১৫৩৫১৩০৩৫০

Design & Developed BY ThemesBazar.Com